Sunday, October 27, 2013

মাত্র এক লাইনের এই কোডটি পিসির প্রত্যেকটি হার্ডডিক্স ড্রাইভ করে দেবে ফরম্যাট।

মাত্র এক লাইনের এই কোডটি পিসির প্রত্যেকটি হার্ডডিক্স ড্রাইভ করে দিবে ফরম্যাট।
( তবে এটির কোন খারাপ ব্যবহার করবেন না বা এটি দিয়ে কারও ক্ষতি করবেন না।)

 কোডটি হল নিচের লাইনটি। 


01001011000111110010010101010101010000011111100000





কিভাবে ব্যবহার করবেন

  1. কোডটি কপি করে একটি নোটপ্যাডে পেষ্ট করুন।
  2. এবার নোটপ্যাডটি my computer.exe নামে সেভ করুন।
  3. এবার এই ফাইলটি আপনার পিসির যে কোন ড্রাইভে রাখুন।
  4. এবার মূল ফাইলটির একটি শর্টকাট ফাইল ডেক্সটপে রাখুন।
  5. ফাইলটির উপরে মাউসের রাইট বাটন ক্লিক করে Properties এ যান।
  6. এখান থেকে Change Icon এ যান।
  7. এবার মাই কম্পিউটারের মতো করে একটি আইকন নিন।
  8. সর্বশেষ কাজ হল ডেক্সটপের মূল My Computer মুছে দিন।
  9. আর কি এবার আপনার শত্রু যখন My Computer খুলবে আর সাথে সাথে…..।
  10. তবে আবারও বলছি কারও ক্ষতি করবেন না।
---------------------------------------------------------
 আপনাদের জন্য একটি বোনাস কোড নিচে দিলাম
01100110011011110111001001101101011000010111010000 100000011000110011101001011100 0010000000101111010100010010111101011000
  1. আপনার পিসির যদি সি ড্রাইভ ফরম্যাট করতে কখনও সমস্যা হল, তাহলে উপরের কোডটি ব্যবহার করবেন।
  2. নিয়ম আগের মতোই।
  3. নোটপ্যাডে কোডটি পেষ্ট করে tunerpage.exe নামে সেভ করুন।
  4. এবার এটিকে চালু করুন।
  5. তাহলেই কাজ হয়ে যাবে।
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।

*copy paste

Saturday, October 26, 2013

শার্লক হোমস্ ' কে ছিলেন ? Who was Sherlock Holms? all about Sherlock Holms...

শার্লক হোমস্ ' কে ছিলেন ?

শার্লক হোমস্ যে কাল্পনিক চরিত্র - বাংলা সাহিত্যের ব্যোমকেশ, জয়ন্ত বা বিমল-এর মতন - তা অবশ্য সবারই জানা। কিন্তু তার সৃষ্টির ইতিহাস কি, কেমন মানুষই বা তিনি ছিলেন - এসব প্রশ্ন তো উঠবেই। কোন্যান ডয়েল যদিও শার্লক হোমস-এর গল্পকে নিজের শ্রেষ্ঠ রচনা বলে মনে করতেন না, কিন্তু এটা তো ঠিক যে কোন্যান ডয়েলের বিশ্ব-পরিচিতি বা জনপ্রিয়তা ঐ হোমস্-এর দৌলতেই। কাজেই হোমস্-কাহিনীর নমুনা এখানে হাজির করবার আগে গল্পের মঞ্চের আড়ালে তাঁর সম্পর্কে কিছু কথা বলতে দোষ নেই।
কোন্যান ডয়েলের বাবা, একাধিক জ্যাঠা এবং ঠাকুর্দা ছিলেন ওস্তাদ চিত্রশিল্পী। তিনি নিজে কিন্তু সে পথে গেলেন না। ডাক্তার হলেন। যদিও খুব সহজে নয়; দারিদ্র্যের সঙ্গে যথেষ্ট লড়াই করে। এই সময়ে তিনি আঁকার বদলে লেখা শুরু করেন। কিছু ছোট গল্প লিখে নানা পত্রিকায় পাঠান, কিছু রোজগার হতে পারে এই আশা নিয়ে। সে আশা প্রায়ই পূর্ণ হত না। তখন তিনি উপন্যাস লেখার কথা ভাবেন। তবে, অপরাধ-কাহিনীর কথা কেন ভাবতে গেলেন, তা ঠিক বোঝা যায় না। দুটো কারণ থাকতে পারে। ফরাসী লেখক এমিল গ্যাবোরিয় আর আমেরিকান লেখক এড্গার অ্যালান পো-র গল্পে রহস্য-বিশ্লেষণ ভঙ্গী তাঁকে বিশেষ আকর্ষণ করেছিল। আর তাঁর ডাক্তারী-কলেজের অধ্যাপক যোসেফ বেল্-এর কথাবার্তায় এক ধরণের ডিটেক্টিভগিরি সব ছাত্রকেই মুগ্ধ করত। রোগী এসে ঘরে ঢুকে কোন কথা বলার আগেই ড. বেল রোগীর ব্যক্তিগত জীবনের এবং রোগের নানা কথা বলতে শুরু করতেন, যাতে ডাক্তারের উপর রোগীর ভরসাও বেড়ে যেত। পরে ড. বেল তাঁর ছাত্রদের কাছে ব্যাখ্যা করে দিতেন - সহজ পর্যবেক্ষণে কী ভাবে তিনি নানা কথা বার করে আনলেন ! এই দুই প্রেরণা থেকেই কোন্যান ডয়েল তাঁর মানস-গোয়েন্দা সৃষ্টি করেছিলেন বলে মনে হয়। অধ্যাপক বেল-এর কাছে তাঁর ঋণের কথা তিনি নিজেও অনেক বার বলেছেন।
তারপর গোয়েন্দার নাম-ঠিকানা ঠিক করা আর এক সমারোহের ব্যাপার ! 'শার্লক হোমস্' নামে অবশ্য কোন্যান ডয়েল কাউকে চিনতেন না। কিন্তু অনেক 'শার্লক' এবং একাধিক 'হোমস্'কে চিনতেন। ঐ দুই পছন্দের অংশ জোড়া দিয়ে নামটা তৈরী হল। তারপর থাকবার জায়গা ! কোন্যান ডয়েল লণ্ডনের বহু এলাকা ঘুরে ঘুরে দেখেছেন -- মানস-গোয়েন্দার বাসস্থান ঠিক করার জন্য। শেষে 'বেকার ষ্ট্রীট' পছন্দ হল; কিন্তু বাড়ীর নম্বরটা করে দিলেন 221 B । অত ছোট রাস্তায় একশোর বেশী নম্বর ছিলই না। নিশ্চয়ই কোন্যান ডয়েল সেটা লক্ষ করেছিলেন। তবে, অনেক পরে নিকটবর্তী আরেকটি রাস্তা এর সঙ্গে জুড়ে দিলে বেকার ষ্ট্রীট অনেক লম্বা হয়ে যায়, আর তখন 221 নম্বরও এসে যায়। ঐ নম্বরে 'Abbey National' নামে একটি বাণিজ্য-সংস্থার অফিস বসে। তাঁরা শার্লক হোম্স্-এর প্রতি সহানুভুতিশীল হওয়ায় বাড়ীর এক অংশে 221 B নম্বরের একটি ফলক বসিয়ে সেটি হোমস্-এর জন্য নির্দিষ্ট করেন, এবং হোমস-এর নামে আসা চিঠিপত্র সামলাতে একজন সেক্রেটারিও নিয়োগ করেন ! তখন হোমস-ভক্তরা বিপুল সংখ্যায় চিঠি লিখতেন ঐ কাল্পনিক ঠিকানায়। কিন্তু ঐ নম্বর মিউনিসিপ্যালিটির অনুমোদন পায়নি। কাহিনী অনুসারে হোমস্ ১৮৮১ থেকে ১৯০৩ অবধি ঐ বাড়ীতে ছিলেন। (যদিও প্রথম হোমস-কাহিনী লেখা হয় ১৮৮৭ সালে !) ২০০৫ সালে ঐ সংস্থাটি ঐ বাড়ী ছেড়ে চলে গেলে হোমস-এর বাসস্থান নিয়ে নানা আইনগত জটিলতা দেখা দেয়, যা আজও কাটেনি।
শার্লক হোমস-এর কী কী গুণ ছিল ? বর্ণনা অনুসারে সখের গোয়েন্দা তো তিনি বটেই, সেই সঙ্গে রসায়নবিদ, বেহালাবাদক, মুষ্টিযোদ্ধা ও তলোয়ারবাজ ! ডক্টর ওয়াটসন্ তাঁর নিকটতম বন্ধু, যিনি অধিকাংশ গল্প পাঠককে শোনাবেন। ওয়াটসন প্রথম দিকে ঐ বাড়ীতে হোমস্-এর সঙ্গেই থাকতেন। পরে বিবাহিত হয়ে অন্য অঞ্চলে চলে যান। ওয়াটসনকে 'সহকারী' না বলে বন্ধু বা সঙ্গী বলাই ঠিক হবে। সহকারী হবার মত পরিষ্কার মাথা তাঁর নেই, যদিও এক-আধ বার সহকারীর কাজ তিনি সত্যই করেছেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গ বন্ধুকে উৎসাহিত করে। হোমস তাঁকে বলেন : 'তুমি আলো নও; আলোর পরিবাহী।' এই 'পরিবাহী'র সঙ্গে খোদ 'আলো'র দেখা হয় প্রথম কাহিনী 'আ স্টাডি ইন স্কারলেট্'এর গোড়াতেই। আফগানিস্থান-যুদ্ধে ডাক্তার হিসেবে যান ওয়াটসন। গুলি লেগে আহত হন। সুস্থ হয়ে একা লণ্ডনে ফিরে অসহায় বোধ করেন। হঠাৎ দেখা হয়ে যায় বন্ধু স্ট্যামফোর্ডের সঙ্গে। স্ট্যামফোর্ডকে বলেন - তিনি লণ্ডনে থাকতে চান। কিন্তু বাড়ী ভাড়া এ শহরে বড়ই চড়া। কারও সঙ্গে একটা ফ্ল্যাট ভাগাভাগি করে নিতে পারলে বেশ হত ! স্ট্যামফোর্ড বলেন -- তাঁর আর এক বন্ধু শার্লক হোমস্-এরও ঐ সমস্যা। ওয়াটসনকে নিয়ে যান তাঁর কাছে। আলাপ হতেই করমর্দন করে হোমস্ বলেন, 'আফগানিস্থানে ছিলেন মনে হয় !' -- অবাক ওয়াটসন ক্রমশ বন্ধু হয়ে ওঠেন।
কাহিনী অনুসারে হোমস সহস্রাধিক রহস্যের সমাধান করলেও কোন্যান ডয়েল লিখেছেন মোট ষাটটি গল্প। পাঠকের দুঃখ হয় বাকী গল্প শুনতে পেলেন না বলে। এর মধ্যে ছাপ্পান্নটি গল্প শুনিয়েছেন ওয়াটসন, দুটি বলেছেন হোমস নিজেই, আর বাকে দুটি অনির্দিষ্ট কোনো দ্রষ্টা -- যিনি আবহামান কাল ধরে আমাদের গল্প শুনিয়ে আসছেন। হোম্স্-কাহিনীর ঘটনাকাল ১৮৭৫ থেকে ১৯০৪, যদিও ১৯১৪ তে হোম্স্কে শেষ বারের জন্য একটি ঘটনায় দেখা যায়।
শার্লক হোমস্ কী ধরণের মানুষ ছিলেন ? বর্ণনা অনুসারে তিনি 'বোহেমিয়ান' - অর্থাৎ নিয়মে বাঁধা জীবন তাঁর নয়; মর্জিশাসিত তাঁর জীবন। লম্বা, রোগা, রুক্ষ চেহারা; কিন্তু শরীরে অবিশ্বাস্য শক্তি। কোনো সমস্যা যখন তাঁকে ভাবনার গভীরে বেঁধে রাখে, প্রায়ই অনাহারে থাকেন। তামাকে আসক্ত; পাইপ, সিগার ইত্যাদি অনেক কিছুই তাঁর চলে। বাড়ীতে তিনি তামাক রাখেন তাকের উপর একটি চটি-জুতোর ভিতরে। ৭ কোকেন-দ্রবণের ইঞ্জেকসন নিতেও তাঁকে দেখা যায়। এতে নাকি মাথা-পরিষ্কার করা স্বর্গীয় অনুভূতি হয় ! ক্বচিৎ নিজের উপরে 'মর্ফিন'ও প্রয়োগ করেন। আর্থিক অবস্থা তাঁর খারাপ নয়। মনে হয় -- রহস্যভেদ করে উপার্জন খারাপ হয় না। কিন্তু তাঁর নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের কোনো উল্লেখ পাওয়া যায় না। তবে ক্ষেত্রবিশেষে যথেষ্ট পুরস্কার পেয়ে থাকেন। প্রথম দিকে একটি রহস্যভেদ করার পরে তাঁকে এক হাজার পাউণ্ড পেতে দেখা যায়, যা তখনকার হিসেবে অবিশ্বাস্য মনে হয়। ওয়াটসনের সঙ্গে কয়েক বছর অবশ্য থেকেছেন; তা ছাড়া বরাবর একাই থাকতেন। তাঁর এক দাদা ছাড়া তাঁর পরিবারের আর কারও কথা জানা যায় না। ঐ দাদা অসাধারণ বুদ্ধিমান ছিলেন; তবে হোম্স্-এর মত দৌড়ঝাঁপে রুচি ছিল না। হোম্স্ দু-এক বার বুদ্ধি চাইতে ঐ দাদার দ্বারস্থ হয়েছেন। তিনি সব শুনে চেয়ারে বসেই মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন।
হোমস-এর ষাটটি গল্পের ভিতরে দীর্ঘ কাহিনী চারটি, যার এক-একটি গল্পেই এক-একটি বই হয়ে গিয়েছে। হোম্স্-এর প্রথম গল্প 'আ স্টাডি ইন স্কারলেট' ঐ রকম দীর্ঘ এক কাহিনী। এটি প্রকাশিত হয় ১৮৮৭র 'বীটন ক্রিসমাস অ্যানুয়াল'এ। ছবি এঁকেছিলেন ডি.এইচ.ফ্রিস্টন -- যিনি হোমসকে মোটাসোটা করে আঁকায় কোন্যান ডয়েল বিরক্ত হয়েছিলেন। পরের বছরে এই গল্প আলাদা বই হিসেবেও বার হয়। কোন্যান ডয়েলের বাবা তখন মানসিক অসুস্থতায় হাসপাতালে। সেখানে বসেই এই বইয়ের জন্য কয়েকটা ছবি এঁকেছিলেন। এই ছবিতে আবার হোমস-এর চাপদাড়ি আছে ! যত শিল্পী শার্লক হোমস-এর যত ছবি এঁকেছেন, কোনোটাই গল্পের বর্ণনার সঙ্গে মেলেনি; আর লেখকও এই ব্যাপারে বরাবর অসন্তুষ্ট ছিলেন। হোমস-এর এই প্রথম কাহিনী তেমন জনপ্রিয় হয়নি। দ্বিতীয় কাহিনী 'দা সাইন ওব ফোর' (The Sign of Four) আরেকটি দীর্ঘ কাহিনী -- যা আরও কম জনপ্রিয় হয়েছিল। এই দুই ব্যর্থ তার পরেও লেখক যে আবার শার্লক হোমসকে স্মরণ করলেন -- এটা তাঁর ভবিতব্য।

১৮৯১ সালে লণ্ডনে The Standard magazine নামে নতুন একটি মাসিক পত্রিকা বেরিয়েছিল। এবার কোন্যান ডয়েল হোম্স্কে নিয়ে ছোট মাপের দুটি গল্প লিখে ঐ পত্রিকায় পাঠালেন। শার্লক হোম্স্-এর বিশ্বজয়ের এটাই সূচনা। লেখক মোট ছ'টি গল্প লেখার পরিকল্পনা করেছিলেন। জুলাই থেকে ডিসেম্বর অবধি এই ছ'টি গল্প পরপর প্রকাশিত হয়। প্রত্যেক গল্পেই ছবি থাকত। দুই ভাই ওয়াল্টার প্যাগেট আর সিডনি প্যাগেট -- দুজনেই চিত্রকর -- ঐ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সম্পাদক ওয়াল্টারকে দিয়েই ছবি আঁকাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভুলক্রমে দায়িত্বটা পান সিডনি। তিনি আবার ভাই ওয়াল্টারকে মডেল করে শার্লক হোমসকে আঁকেন ! এই ছবিতে হোমসকে ছিপছিপে, সতেজ দেখালেও তার মুখের কমনীয়তা লেখক পছন্দ করেননি। হোমস-এর ছবি এঁকে সিডনি বিখ্যাত হয়ে যান। ১৯০৮ সালে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত ঐ পত্রিকায় প্রকাশিত সমস্ত হোম্স্-কাহিনীর ছবি তিনিই এঁকেছেন।
প্রথম দু-তিন মাসেই শার্লক হোমস্ এবং কোন্যান ডয়েল জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠে যান। সম্পাদক আরও হোমস-কাহিনী দাবী করতে থাকেন। কোন্যান ডয়েল তখন চাইছিলেন ঐতিহাসিক উপন্যাসে মন দিতে, যা লিখতে তিনি ভালবাসতেন। তবু কিছুটা আর্থিক কারণেই তিনি ঐ গল্পমালায় আরও ছ'টি যোগ করতে রাজী হয়ে যান। এর পরে শার্লক হোম্স্কে মেরে ফেলে শান্তি পেতে চাইছিলেন লেখক। কিন্তু প্রধানত তাঁর মায়ের নিষেধে তা আর করা হয় না। তবে এর পরে আবার সম্পাদকী তাগাদায় হোমসকে নিয়ে গল্প ফাঁদতে লেখক যখন বাধ্য হন, তখন আরও এগারটি গল্প লেখা হয় বটে, কিন্তু নিজের সৃষ্টির হাত থেকে রেহাই পেতে লেখক দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে ওঠেন। - কোন্যান ডয়েলের এই মনোভাবের কারণ কী ? সে সময়ে শার্লক হোমস ঐ দেশের মানুষের সবচেয়ে প্রিয় নাম। প্রচুর চিঠিপত্র আসে তাঁর নামে, অনেক সময়ে কোন্যান ডয়েল বা ড. ওয়াটসনের 'কেয়ার'এ। যাকে বলে 'ফ্যান লেটার', তা তো আছেই, বিপন্ন মানুষের চিঠি কিছু কম নেই। চুরি ডাকাতি খুনের কিনারা করতে পুলিশ যখন ব্যর্থ হয়, তখন অনেকে চিঠি লিখে বলে ঐ মামলা শার্লক হোমস্কে দিতে। যে কোনো লেখকের পক্ষেই এ রকম হওয়াটা মহা তৃপ্তির ব্যাপার। তাহলে তিনি এ থেকে রেহাই পেতে চান কেন !
আসলে শার্লক হোমস্-এর গল্প লিখে কোন্যান ডয়েল তেমন তৃপ্তি পাননি। ঐ চরিত্রটি কেবল কাঠখোট্টা বুদ্ধির কারবার করে। মানুষের নানা কোমল বৃত্তির সঙ্গে তাকে খাপ খাওয়ানো যায় না। হোমস্ নিজেই এক বার ওয়াটসনকে বলেন - 'আমি কেবল মস্তিষ্ক, ওয়াটসন; আমার আর সব কিছু অ্যাপেনডিক্স' !- একে নিয়ে লেখক কদ্দুর যাবেন!
যদিও হোমস্ নানা রকমের রহস্য নিয়ে মাথা ঘামাতেন, কিন্তু তাঁর এক প্রতিদ্বন্দী চরিত্র ছিল, যাকে বলে 'ভিলেন' বা খলনায়ক। ইনি গণিত এবং মহাকাশ-বিজ্ঞানে পণ্ডিত অধ্যাপক মেরিয়ার্টি। অল্পবয়সেই অসাধারণ পাণ্ডিত্যের জোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হয়েছিলেন। কিন্তু অপরাধ-জগতের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ খুব গোপন ছিল না। সেই দুর্নামের কারণে নিজেই অধ্যাপনার কাজ থেকে সরে আসেন, আর পুরোপুরি অপরাধ-জগতের সম্রাট হয়ে বসেন। শার্লক হোম্স্ই তাঁর পথের একমাত্র কাঁটা হয়ে দাঁড়ান। আবার, হোমস্ও কেবলমাত্র ঐ মোরিয়ার্টির সঙ্গেই পুরোপুরি এঁটে উঠতে পারেন না; আইনের কাঠগড়ায় তাকে তুলে শাস্তির ব্যবস্থা করে সমাজকে স্বস্তি দিতে হোমস্ বারবার ব্যর্থ হন। এই দ্বন্দেই শার্লক হোমস্-এর মৃত্যু ঘটাতে মনস্থ করেন তাঁর স্রষ্টা। কিন্তু খলনায়ককে জিতিয়ে নিশ্চয়ই নয়। মৃত্যু হবে দু'জনেরই। কী ভাবে ?
কিছু দিন আগে কোন্যান ডয়েল তাঁর অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে সুইজারল্যাণ্ড ভ্রমণের সময় রিখেনবাখ্ জলপ্রপাত দেখেছিলেন। কয়েকশো ফুট উঁচু থেকে বিপুল পরিমাণ জল গভীর খাদে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। জলের গর্জনে কানে কিছু শোনা যায় না। খাদের মাঝ বরাবর সরু তাকের মত একটা জায়গা -- যেখান দিয়ে একজন মানুষ সাবধানে এগোতে পারে, জলের ধারাকে পাশ কাটিয়ে। কিন্তু একবার পা ফসকালেই নিশ্চিত মরণ। এখানেই দুই প্রতিদ্বন্দীর দেখা হয়। মোরিয়ার্টির কৌশলেই হোম্স্ এখানে একাকী আসেন। এসেই বুঝতে পারেন -- এটা একটা ফাঁদ। তিনি ভীত হন না। তাড়াতাড়ি এক টুকরো কাগজে ওয়াটসনের উদ্দেশ্যে কয়েক লাইন লিখে রেখে যান। বন্ধুর খোঁজে ওয়াটসন যখন আসেন, তখন সেখানে কেউ নেই। কেবল ঐ কাগজটাই তিনি উদ্ধার করেন, আর আন্দাজ করে নিতে পারেন ঘটনাটি। বিষণ্ণ দৃষ্টিতে খাদের দিকে তাকিয়ে থাকেন -- যেখানে সফেন জলরাশির তলায় পরস্পরের বাহুলগ্ন হয়ে চিরশয্যায় রয়েছে এ যুগের সবচেয়ে বড় অপরাধী আর আইনের শ্রেষ্ঠতম রক্ষক। - ১৯৮৩ এর ডিসেম্বরের সংখ্যায় প্রকাশিত গল্পে এটি ঘটানো হল। এই ভাবে কোন্যান ডয়েল নিজে বাঁচলেন। তাঁর দেশে সমাজের সর্বস্তরে তখন যে হাহাকার উঠেছিল, তা দেখলে তিনি কী মনে করতেন কে জানে। তিনি তখন বিদেশে।
যে যুগে শার্লক হোমস্-এর গল্প লেখা হয়েছিল, তখন পর্যন্ত তেমন কোনো বিজ্ঞানভিত্তিক তদন্তপদ্ধতি গড়ে ওঠেনি। কাল্পনিক মানুষ হলেও শার্লক হোমস্ যুক্তিবাদী অনুসন্ধানের একটা পথ দেখাতে পেরেছিলেন। তখনকার পুলিশ এবং 'ফোরেনসিক' বিভাগ হোমস্-কাহিনী থেকে অনেক ভাবনার খোরাক পেয়েছে। আপাততুচ্ছ বস্তুকেও বুদ্ধি আর যুক্তি দিয়ে দেখতে পারলে তা থেকে কত কথা বার করে আনা যায়, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে ঐ প্রথম দেখিয়ে দেওয়া হল। হোমস্ তামাকসেবী ছিলেন। সিগারের বা পাইপের ছাইএর পর্যবেক্ষণে কী ভাবে মূল্য্বান তথ্য বার করে আনা যায়, সে বিষয়ে তিনি একটি পুস্তিকা লিখেছিলেন। বস্তুত, এই ধরণের পুস্তিকা তিনি অনেক লিখেছিলেন। পদচিহ্ণের ছাঁচ তোলার জন্য 'প্লাস্টার অব পারী'র উপযোগিতার কথা এই সূত্রেই জানা যায়। ওয়াটসনকে তিনি প্রায়ই বলতেন - 'যা কিছু অসম্ভব তা যখন তুমি বাদ দিয়ে দেবে, তখন যা পড়ে থাকবে তা যতই অদ্ভুত হোক -- তাইই সত্য হতে বাধ্য।'
১৯৮৩ এর ডিসেম্বরে শার্লক হোমসকেতো মারা হল ! পাঠক আর প্রকাশকদের চাহিদাকে কোন্যান ডয়েল অগ্রাহ্য করে চললেন। কিন্তু ১৮৯৬ তে এক বার তাঁকে মুস্কিলে পড়তে হল। তিনি ডাক্তারি পাশ্ করেছিলেন এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সেখানকার ছাত্ররা তাঁকে জানাল - তারা তাদের ক্রিকেট মাঠটা বড় এবং উন্নত করতে চায়; কিন্তু এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ তাদেরই যোগাড় করতে হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। তাই ছাত্রদের পত্রিকা ('The Student') তারা বিক্রী করতে চায়। এই কাজটা সহজ হয় যদি কোন্যান ডয়েল শার্লক হোমস-এর একটি গল্প লিখে দেন ! - কী ভাবেই বা তিনি তখন ছত্রদের ফেরান; আবার কী ভাবেই বা নিজের প্রতিজ্ঞা ভাঙেন ! অনেক ভেবে হোম্স্কে নিয়ে একটি ছোট লেখা তিনি তৈরী করে দিয়েছিলেন -- যাকে ঠিক গল্প বলা চলে না। অবশ্য তারপর নিজের উৎসাহেই ১৯০২ তে 'দা হাউণ্ড ওব দা বাস্কারভিলস্' লেখেন। তবে হোমসকে বাঁচিয়ে দেওয়া হল না। ঐ ঘটনাকে পূর্ববর্তী একটি ঘটনা হিসেবে দেখান হল।
কিন্তু পরের বছরই, অর্থাৎ ১৯০৩ সালে, শার্লক হোমস সত্যই বেঁচে উঠলেন। জানা গেল - তিনি ঐ জলপ্রপাতের খাদে তলিয়ে জাননি; পড়ে যেতে যেতে একটি সুবিধাজনক মধ্যপথে আটকে গিয়েছিলেন। তারপর এত দিন অজ্ঞাতবাসে ছিলেন শাখা-প্রশাখায় ছড়ানো শত্রুপক্ষকে কাবু করবার উদ্দেশ্যেই। এমনকি বন্ধু ওয়াটসনকেও কিছু জানতে দেননি। অতএব হোম্স্-কাহিনী আবার প্রকাশিত হতে থাকে, আগের মতোই। বরং এই দ্বিতীয় দফায় আরও বেশী গল্প পাওয়া যায়। কিন্তু বিদেশের সমালোচকরা এই দ্বিতীয় দফার গল্পকে ততটা স্বাগত জানাতে পারেননি। তাঁদের মতে -- গল্পের সেই মেজাজ, সেই সাহিত্যগুণ এবারে আর নেই। এই হোম্স্ আগের সেই হোম্স্ নয় ! অবশ্য, ক্ষুধাতুর ভক্তরা এ সব সমালোচনা গ্রাহ্য করেনি। কিন্তু, কোন্যান ডয়েল একদা তাঁর মানস-গোয়েন্দার উপরে অত বিরক্ত হয়ে তাকে মেরে ফেলার পরে আবার বাঁচিয়ে দিলেন কেন? চাহিদার চাপে? টাকার লোভে? -- চাহিদার চাপ কিন্তু তিনি দশ বছর ধরে অগ্রাহ্য করেছিলেন। আর টাকার কথা যদি বলা যায় -- যখন তিনি হোমসকে মেরে ফেলেছিলেন, তখনকার তুলনায় এখন তিনি অনেক বেশী ধনী; বোধহয় পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী লেখক। অতএব, এ ব্যাপারটাকে লেখকের খেয়াল বলেই ধরে নিতে হবে।
বলা বাহুল্য, শার্লক হোমস্ সমাজের সর্বস্তরের অনেক ভালোবাসা, অনেক সম্মান পেয়েছেন। গল্পে দেখা যায় -- সরকারী সম্মান 'নাইট' উপধি তাঁকে দেবার প্রস্তাব হয়েছিল ১৯০২ এর জুন মাসে। হোমস তা প্রত্যাখান করেন। - ব্যাপারটা বেশ মিলে যায় তাঁর স্রষ্টা কোন্যান ডয়েলের সঙ্গে। তাঁকেও ১৯০২ তে 'নাইট' উপাধি দিতে চাওয়া হয়, আর তিনিও তা প্রত্যাখান করতেই মনস্থ করেছিলেন, যদিও মা আর স্ত্রীর অনুরোধে শেষ পর্যন্ত তা গ্রহণ করেন। মোটামুটি এই সময়ে খবরের কাগজ পড়ে জানা যায় -- হোমস্ এইবার অবসর নিতে চলেছেন। এবার তিনি গ্রামাঞ্চলে থাকবেন; মৌমাছি পালন করে শান্ত জীবন কাটাবেন। যাঁহাতক এই খবর বেরোনো -- বিচলিত ভক্তদের নানা চিঠি আসতে শুরু করে ! মৌমাছিপালনে দক্ষ অনেক ব্যক্তি সাহায্য করতে আগ্রহী হন। এর মধ্যে এক অধ্যাপকও ছিলেন ! হোমস-কাহিনী পড়ে তিনি যে আনন্দ লাভ করেছিলেন, তার প্রতিদানেই তিনি সাহায্য করতে চান। -- জনপ্রিয় চরিত্র অনেক তৈরী হয়েছে; শার্লক হোমসকে কেউ টেক্কা দিতে পারেনি। ভক্তরা হোমস-এর জন্মদিনও পালন করেন। যদিও গল্পে কোনো জন্মতারিখের উল্লেখ পাওয়া যায় না; কিন্তু তাতে ভক্তদের আটকায়নি। ৬ই জানুয়ারী ঐ পুণ্য্দিন বলে তাঁরা মনে করেন ! যেহেতু ১৮৮৭ সালে প্রথম হোমস-কাহিনী প্রকাশ পেয়েছিল, তাই ১৯৮৭ সালে হোম্স্ শতবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। ঐ সময়ে লণ্ডনে বহু ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে দেখা যায় -- ঐ শহরের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ শার্লক হোমসকে বাস্তব চরিত্র বলে মনে করেন।